AdGuru

Saturday, January 18, 2014

WALTON Wallpad-7

দেশীয়  বাজারে আন্ড্রয়েড চালিত স্মার্ট ফোনের অব্যহত সাফল্যের পর গত মাসের শুরুতেই দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য প্রতিষ্ঠান ওয়াল্টন বাজারে নিয়ে আসে তাদের প্রথম অ্যান্ড্রয়েডচালিত ওয়ালপ্যাড ৭ ট্যাব। ওয়াল্টন তাদের স্মার্টফোনগুলো দিয়ে ভোক্তা মহলে বেশ ভাল সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। মূলত এ কারণেই মুক্তির আগে থেকেই ওয়াল্টনের ট্যাব সম্পর্কে দেশি প্রযুক্তি প্রেমীরা বেশ আগ্রহী ছিলেন। আমাদের আজকের হ্যান্ডস অন রিভিউতে থাকছে- ওয়াল্টনের ওয়ালপ্যাড ৭ ট্যাবটি। তো চলুন দেখে নেই, ওয়ালপ্যাড ৭ গ্রাহকদের আশা আকাঙ্ক্ষার কতটুকু প্রতিফলন ফেলতে পেরেছে।


এক নজরে ওয়ালপ্যাড ৭ এর প্রধান ফিচার সমুহঃ
  • প্রসেসরঃ কর্টেক্স এ৭ ভিত্তিক কোয়াড কোর প্রসেসর, ১.২ গিগাহার্জ ক্লক স্পিড।
  • চিপসেটঃ মিডিয়াটেক ৮৩৮৯
  • ডিসপ্লেঃ ৭ ইঞ্চি এইচডি আইপিএস ডিসপ্লে, রেজুলেশান ১২৮০x৮০০ পিক্সেল, ক্যাপাসিটিটিভ টাচ
  • র‍্যামঃ ১ গিগাবাইট, ইউজার অ্যাভেলেবল ৯৫৭ মেগাবাইট।
  • জিপিইউঃ পাওয়ার ভিআর এসজিএক্স ৫৪৪ এমপি
  • ইন্টারনাল স্টোরেজঃ ৮ গিগাবাইট, ১.২ গিগাবাইট অ্যাপ ইন্সটলেবল
  • ডুয়াল ক্যামেরাঃ ৫ মেগা পিক্সেল রিয়ার, ২ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা
  • ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং এবং প্লেব্যাক
  • সিম সাপোর্টঃ নেটওয়ার্ক টাইপ- UMTS/GSM, নেটওয়ার্ক স্পিডঃ GPRS/EDGE/3G/HSPA/HSPA+
  • জিপিএস, ব্লু টুথ, ওয়াই ফাই কানেক্টিভিটি
  • ইউএসবি ওটিজি সাপোর্ট
  • ওয়্যারলেস ডিসপ্লে শেয়ারিং
  • ৪০০০ মিলি এম্পিয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি
প্রধান দুর্বলতাঃ
  • লাউড স্পিকার সাউন্ড খুব তীক্ষ্ণ যেটি কানে লাগে
  • কিছুটা ল্যাগি ইউজার ইন্টারফেজ
  • গেমিং পারফর্মেন্স আশানরুপ নয়
  • নেটিভ ভিডিও কোডেক এর স্বল্পতা, ক্ষেত্র বিশেষে দুর্বল ভিডিও রেন্ডারিং

     
ওয়াল্টন ওয়ালপ্যাড ৭ এ ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াটেক চিপসেট। সচরাচর স্বল্প মূল্যের ট্যাবগুলোতে এর আগে আমরা রকচিপ, অ্যামলজিক নতুবা অল উইনার চিপ ব্যবহৃত হতে দেখেছি। মিডিয়াটেক স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বাজারে নিজেদের আলাদা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষকরে কম দামে মোটামুটি হাই এন্ড ডিভাইসে মিডিয়াটেক চিপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে বাজেট ইউজারদের কাছে মিডিয়াটেক বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে ওয়ালপ্যাড ৭ এ রয়েছে সিম ব্যবহারের সুবিধা। ১০০০০-১৫০০০ টাকার ডিভাইসগুলোতে সচরাচর সিম ব্যবহারের সুবিধা দেখা যায় না। কোয়াডকোর প্রসেসর, পাওয়ার ভিআর জিপিইউ, ১ জিবি র‍্যামের ডিভাইসটির স্পেসিফিকেশনও বেশ আকর্ষণীয়। স্মার্টফোনে সাফল্য লাভের পর ট্যাবেও মিডিয়াটেক সফল হবে একথা আশা করা অমূলক কিছু নয়। দেশের বাজারে ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হতে পেরেছে এ কথা খুব শীঘ্রই আমরা জানতে পারব।
রিটেইল বক্সে যা থাকছেঃ
ওয়ালপ্যাড ৭ বাজারজাত করা হয়েছে একটি সুদৃশ্য এবং বেশ কমপ্যাক্ট বক্সে। প্রয়োজন অতিরিক্ত বক্সটি অযথা বড় করা হয়নি। বক্সটি খোলার পর ভেতরে থাকছে-
  • একটি ওয়াল্টন ওয়ালপ্যাড ৭ ট্যাব
  • একটি চার্জার
  • একটি ইন ইয়ার ঘরানার ইয়ার পিস এবং 
  • ওয়ারেন্টি কার্ড
চার্জার এর সাথে থাকা ক্যাবলটি আলাদাভাবে ডাটা ক্যাবল হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ইয়ার পিসটি খুব বেশি মান সম্মত না হলেও যে জিনিসটি ভাল লেগেছে সেটি হল এর ক্যাবল। চ্যাপ্টা ক্যাবল ব্যবহার করায় এটি ছিঁড়ে যাবার সম্ভবনা কম। মোট কথা একটি স্ট্যান্ডার্ড রিটেইল বক্সে যা যা থাকা দরকার এক্ষেত্রেও তাই থাকছে। 
Box

ডিজাইন এবং বিল্ট কোয়ালিটিঃ

লম্বাটে চার কোনা করে তৈরি করা হয়েছে ওয়াল প্যাড ৭। ডিভাইসটি উচ্চতায় ১৮৯ মিলিমিটার, প্রস্থে ১১৫.৫ মিলিমিটার এবং পুরুত্তে ৮.৯ মিলিমিটার। ওজন ব্যাটারিসহ ৩০৯.৪৬ গ্রাম।এর ডিজাইন অনেকটা প্রথম জেনারেশন নেক্সাস ৭ ট্যাবের মত। তবে বিল্ট কোয়ালিটিতে নেক্সাসের সাথে এর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তাই আপাতত সেদিকে যাচ্ছি না। ওয়াল প্যাড ৭ এর ম্যাটিরিয়াল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিক এবং স্টেইনলেস স্টিল। ডিভাইসটির পেছনের দিকের প্রায় পুরোটাই স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি, কেবল উপরে এবং নিচের দিকে প্লাস্টিকের শেল রয়েছে। পেছন থেকে দেখতে ডিভাইসটি বেশ আকর্ষণীয় যেটি আপনাকে প্রিমিয়াম ফিল দেবে। পেছন থেকে উপরে বাদিকের কোনায় রয়েছে ক্যামেরা। নিচের দিকে বাম কোনায় রয়েছে সিম এবং মাইক্রো এস ডি কার্ড স্লট। আর ডানদিকে রয়েছে লাউড স্পিকার। এ দুটোর ঠিক মাঝামাঝি ছোট একটি রিসেট বাটন। পেছন দিক থেকে ডান পাশের বর্ডারে রয়েছে পাওয়ার, ভলিউম রকার এবং হোম বাটন। এছাড়া উপরের বর্ডারে বাদিকে রয়েছে ইউ এস বি কাম চার্জিং পোর্ট এবং ডান দিকে রয়েছে ৩.৫ এম এম অডিও জ্যাক।



সামনের দিক থেকে সম্পূর্ণ ডিসপ্লের চারপাশে রয়েছে বেশ প্রশস্ত বেজেল। উপরের দিকের ঠিক মাঝখানে রয়েছে ইয়ার পিস। এর পাশেই ডানদিকে রয়েছে দুটি সেন্সর- প্রক্সিমিটি এবং লাইট সেন্সর এবং একেবারে ডান দিকের কোনায় রয়েছে ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা।

 

আগেই বলা হয়েছে পেছনের দিক, ডিভাইসটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। কিন্তু এতে কিছু সমস্যাও রয়েছে। স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করার ফলে এতে স্ক্রাচ পরে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। তাছাড়া রাবার গ্রিপ ব্যবহার না করায় অসাবধানতা বশত এটি হাত থেকে ফসকে যাবার সম্ভবনা রয়েছে।

 

হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারঃ

ডিভাইসটির হার্ডওয়্যার এর উল্লেখযোগ্য দিক হল কোয়াড কোর কর্টেক্স এআরএম ৭ আর্কিটেকচার ভিত্তিক প্রসেসর যার ক্লক স্পিড ১.২ গিগাহার্জ। চিপসেট হিসেবে রয়েছে মিডিয়াটেক এমটি ৮৩৮৯ চিপ। এছাড়া আরও আছে ১ গিগাবাইট র‍্যাম যার মধ্যে ৯৫৭ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য, পাওয়ার ভিআর এসজিএক্স ৫৪৪ এম পি জিপি ইউ, ৪০০০ মিলি এম্পিয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। সেন্সরের মধ্যে রয়েছে, থ্রি এক্সিস এক্সিলারোমিটার সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর এবং লাইট সেন্সর। ডিভাইসটির অফিসিয়াল ডাটা অনুযায়ী এতে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল রিয়ার এবং ২ মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা। কিন্তু ক্যামেরা সেটিং এবং বেঞ্চমার্ক টুল হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে এর রিয়ার ক্যামেরা ৮ মেগাপিক্সেল এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেল, যেটি আমাদের বেশ অবাক করেছে। ডুয়াল ক্যামেরার সুবিধা থাকলেও ডিভাইসটিতে কোন ফ্ল্যাশ নেই, যেটি ডিভাইসটির হার্ড ওয়্যার এর অন্যতম দুর্বলতা। হার্ড ওয়্যার স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ডিভাইসটি এর ব্যবহারকারীদের বেশ ভাল মানের কর্মদক্ষতা প্রদান করতে সক্ষম হবার কথা।

 

সফটওয়্যার হিসেবে ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আন্ড্রয়েড জেলিবিন ৪.২.২ সংস্করণ। এক্ষেত্রে আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। ৪.২.২ জেলিবিনের সকল সুযোগ সুবিধাই ডিভাইসটিতে রয়েছে। তবে সর্বশেষ আন্ড্রয়েড ভার্শন কিটক্যাট ৪.৪.২ এর তুলনায় ৪.২.২ কিছুটা পুরনো।

ডিসপ্লে, টাচ রেসপন্স, ইউজার ইন্টারফেজঃ

ওয়ালপ্যাড ৭ এ ব্যবহার করা হয়েছে ৭ ইঞ্চি এইচডি আইপিএস ডিসপ্লে যার রেজুলেশন ১২৮০ x ৮০০ পিক্সেল। ডিভাইসটির ডিসপ্লে এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ডিসপ্লের কালার স্যাচুরেশন আমাদের কাছে বেশ একুরেট বলে মনে হয়েছে। ভিডিও প্লেইং এর ক্ষেত্রে এর ভিভিড, ব্রাইট, লাইভ কালার আউট পুট আপনাকে বেশ প্রশান্তির অনুভূতি দেবে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, ডিভাইসটির ভিউইং অ্যাঙ্গেল ও বেশ ভাল মানের। কোনাকুনি ভাবে প্রায় ১৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত আপনি কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই ডিসপ্লের কন্টেন্ট উপভোগ করতে পারবেন। তবে ডিভাইসটিতে ডিসপ্লের প্রটেকশন হিসেবে আলাদা কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় নি। সমসাময়িক অধিকাংশ স্মার্ট ফোন এবং ট্যাবে ডিসপ্লে প্রটেকশন হিসেবে গরিলা গ্লাসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
ক্যাপাসিটিটিভ টাচ ব্যবহৃত হওয়ায় ডিভাইসটির টাচ রেসপন্স বেশ স্মুথ এবং অ্যাকুরেট। এর সাথে যুক্ত হয়েছে মাল্টিটাচ সাপোর্ট। স্বল্প মূল্যের ট্যাবগুলোতে সাধারণত টাচ রেসপন্স নিয়ে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেদিক থেকে ওয়াল্টন ওয়ালপ্যাড ৭ ব্যবহারকারীদের একদম ত্রুটিমুক্ত টাচ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দিবে।
ইউজার ইন্টারফেজ হিসেবে ওয়ালপ্যাডে ব্যবহার করা হয়েছে স্টক জেলিবিন আন্ড্রয়েড ইউআই। অর্থাৎ ওয়াল্টন এর ইউজার ইন্টারফেজে কোন প্রকার কাস্টমাইজ করেনি। এর আগে আমরা ওয়াল্টনের কিছু ফোনে কাস্টমাইজড ইউআই এর ব্যবহার দেখেছি। স্টক আন্ড্রয়েড ইউআই প্রেমীরা সাধারণত অন্যকোন ইউজার ইন্টারফেজ এ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ডিভাইসটিতে স্টক আন্ড্রয়েড ইউআই ব্যবহার হওয়াতে এটি স্টক বা ভ্যানিলা আন্ড্রয়েড প্রেমীদের খুব ভাল লাগবে। এর ডিফল্ট লঞ্চারটি কিছুটা ল্যাগি, হোম স্ক্রিন কিংবা অন্য কোথাও পেইজ ট্রানজিশন এর ক্ষেত্রে যেটি চোখে পড়বে।  বিগত কয়েক বছর ধরে গুগল এর ট্যাব্লেট ইউআই ( ল্যান্ডস্কেপ মোড) এ পরিবর্তন এনে নতুন ‘ফ্যাব্লেট ইউআই’ ( পোর্ট্রেইট) এর প্রবর্তন করেছে।  এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ালপ্যাড ৭ এর ক্ষেত্রেও ফ্যাব্লেট ইউআই ব্যবহৃত হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিভাইসটির সফট কি গুলো কিছুটা কাস্টমাইজ করা হয়েছে। নেক্সাস ট্যাবগুলোতে যেখানে কেবল মাত্র তিনটি সফট কি- ব্যাক, হোম, ব্যাকগ্রাউন্ড রানিং অ্যাপ কি ব্যবহার করা হয় সেখানে এই ডিভাইসটিতে এ তিনটি সফট কি ছাড়াও অতিরিক্ত- মেন্যু কি, ভলিউম ডাউন, ভলিউম আপ এবং স্ক্রিনশট কি ব্যাবহার করা হয়েছে। স্ক্রিনশট কি ব্যবহার কারীদের বেশ কাজে আসবে। এর ফলে অন্য কোন অ্যাপ ব্যবহার না করে কিংবা কোন কম্বিনেশন কি না চেপে সহজেই ব্যবহারকারীরা স্ক্রিনশট নিতে পারবেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফিচার হচ্ছে ডুয়াল প্যানেল ভিউ। ডুয়াল প্যানেল ভিউ সুবিধা থাকায় সেটিং মেন্যুর সাব মেন্যুতে থাকা সব অপশন এখন একটি প্যানেল থেকেই দেখা যাবে। এছাড়া উইজেট হিসেবে রয়েছে গুগল অ্যানালগ ক্লক উইজেট, মিউজিক উইজেট, পাওয়ার কন্ট্রোল উইজেট প্রভৃতি। নিচের স্ক্রিন শটে হোম পেইজ দেখা যাচ্ছে। প্রথমটি পোর্ট্রেইট এবং দ্বিতীয়টি ল্যান্ডস্কেপ মোড ব্যবহার করে নেয়া হয়েছে। লঞ্চার হিসেবে Holo Launcher HD ব্যবহার করা হয়েছে।

  

মাল্টিমিডিয়া- ক্যামেরা, অডিও, ভিডিওঃ

ওয়ালপ্যাড ৭ একটি পুর্নাঙ্গ মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস। এতে রয়েছে অডিও,ভিডিও এবং ক্যামেরার বেশ ভাল একটি কম্বিনেশন।
ডিভাইসটির অডিও কোয়ালিটি নিয়ে আমাদের তেমন কোন অভিযোগ নেই। তবে লাউড স্পিকারের অডিও আউটপুট আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে। লাউড স্পিকারের অডিও বেশ তীক্ষ্ণ এবং এটি যদি আপনি অনেক্ষন ধরে শুনতে থাকেন তাহলে বেশ বিরক্তির উদ্রেগ করবে। কম ভলিউম এ অডিও শোনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি হয়তো আপনাকে এড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু ভলিউম বাড়ানোর সাথে সাথে পার্থক্য আপনার কাছে স্পষ্ট হবে। আমরা ধারণা করছি এটি ডিভাইসের সাউন্ড ইঞ্জিনের কোন সমস্যা নয়। লাউড স্পিকার ডিভাইসের পিছনের দিকে হওয়ায় এবং অডিও থ্রো করার মিডিয়া সরু হওয়ায় সাউড ওয়েভ ঠিকভাবে আয়েশে বের না হতে পারায় এই সমস্যা হচ্ছে বলে আমাদের বিশ্বাস। ডিভাইসটিতে ইয়ার পিসের সাহায্যে অডিও আউটপুট বেশ প্রশান্তি ময়। আগেই উল্লেখ করেছি ইয়ার পিসের কোয়ালিটি খুব বেশি সন্তোষজনক নয়, তা সত্ত্বেও এটি দিয়ে গান কিংবা অন্য কোন অডিও উপভোগ করতে আপনার খারাপ লাগবে না। ভাল মানের ইয়ার পিস ব্যবহার করলে ডিভাইসটি থেকে আপনি বেশ ভাল অডিও এক্সপেরিয়েন্স পেতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
সাধারণত বাজেট ফ্রেন্ডলি ট্যাবগুলোতে ডুয়াল ক্যামেরা দেখা যায় না। কেবল মাত্র ভিডিও কল করার জন্য ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরাই বেশিরভাগ ডিভাইসে দেয়া থাকে। সেদিক থেকে ওয়ালপ্যাড ৭ ডিভাইসটিতে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল রিয়ার এবং ২ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, অফিসিয়াল ডাটাতে ৫ মেগাপিক্সেল এবং ২ মেগাপিক্সেল এর কথা উল্লেখ থাকলেও আসলে রিয়ার ক্যামেরাটি ৮ মেগাপিক্সেল এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেলে ছবি তুলতে সক্ষম। ডিভাইসটির ক্যামেরা ইন্টারফেজ আর অন্য যে কোন মিডিয়াটেক ডিভাইসের মতই। ক্যামেরার উল্লেখযোগ্য ফিচার গুলোর মধ্যে রয়েছে, অটো ফোকাস, এইচ ডি আর, ফেস ম্যাজিক, প্যানারোমা, অটো ফেস ডিটেকশন সুবিধা প্রভৃতি। ক্যামেরা সেটিং থেকে আলাদা ভাবে ‘সিন’ নির্বাচন করার সুবিধাও থাকছে। রয়েছে ছবির সাথে জিপি এস থেকে প্রাপ্ত লোকেশন জুরে দেওয়ার সুবিধা, বিভিন্ন কালার ইফেক্ট নির্বাচনের সুবিধা, সেলফ টাইমার মোড, কাস্টম আই এস ও নির্বাচনের সুবিধা, টানা ৯৯ টি পর্যন্ত মাল্টি শট নেয়ার সুবিধা। এছাড়া ম্যানুয়াল হোয়াইট ব্যালেন্স এবং এন্টি ফ্লিকার অপশন তো থাকছেই।
এত সব ফিচার থাকার পরও এর ক্যামেরার ছবির মান মোটামুটি। ফ্ল্যাশ লাইট না থাকা ডিভাইসটির একটি বড় দুর্বলতা। কম আলোতে, বিশেষ করে রাতের বেলায় ডিভাইসটি দিয়ে ছবি তুলতে বেশ বেগ পেতে হবে। নিচে ওয়ালপ্যাড ৭ এর সাহায্যে তোলা কিছু ছবি স্যাম্পল হিসেবে দেয়া হল- প্রথম ছবিটি আউটডোর, দ্বিতীয়টি ইনডোর এবং সবশেষের টি রাতের আলোতে তোলা। সাইটের সুবিধার জন্য ইমেজ রেজুলেশন কমিয়ে সাইজ ছোট করে দেয়া হয়েছে।





ক্যামেরাতে যথেষ্ট পরিমান অপশন থাকলেও ভিডিও রেকর্ডিং এর ক্ষেত্রে খুব বেশি অপশন নির্বাচনের সুযোগ নেই। উল্লেখযোগ্য ফিচারের মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন যা সংক্ষেপে ই আই এস নামে পরিচিত। ভিডিও রেকর্ডারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ১৯২০ x ১০৮০ রেজুলেশন অর্থাৎ ফুল এইচ ডি ভিডিও ধারন করা যাবে। ভিডিও প্লে ব্যাকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে একটা বিষয় আমাদের হতাশ করেছে। সেটি হল, ডিভাইসটির ন্যাটিভ ভিডিও কোডেক সাপোর্ট। দুর্বল ন্যাটিভ কোডেক সাপোর্টের কারণে বেশ কিছু ভিডিও প্লে ব্যাকের সময় আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করার পরেও সমস্যা থেকে গেছে। কাজেই ভিডিও প্লে ব্যাকের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ভাল মানের থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করে সমস্যার অনেকটাই কাটিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। MX Player ব্যবহার করে চালানো ভিডিওর স্ক্রিনশট নিচে দেয়া হল।




গেমিংঃ

অনেক ব্যবহারকারীই শুধু মাত্র গেমিং এর জন্য ট্যাব ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তবে ওয়ালপ্যাড ৭ আপনাকে হতাশ করবে। স্পেসিফিকেশনে আমরা দেখেছি কোয়াডকোর ১.২ গিগাহার্জ প্রসেসর, ১ গিগাবাইট র‍্যাম এবং জিপি ইউ পাওয়ার ভি আর এস জি এক্স ৫৪৪ এম পি যেটি ওপেন জি এল ২ সমর্থন করে। এতদসত্তেও হালকা, মাঝারি এবং ভারি মানের গেমগুলোতে আমরা ডিভাইসটি থেকে আশানুরূপ পারফর্মেন্স পেতে ব্যর্থ হয়েছি। প্রায় একই ধরনের স্পেসিফিকেশনের মিডিয়াটেক চিপ চালিত স্মার্ট ফোন গুলোতে যে গেমগুলো হাই সেটিংস এ কোন প্রকার ল্যাগ ছাড়াই আমরা এর আগে চালিয়েছি সেই গেমগুলোর প্রতিটিতেই ওয়ালপ্যাড ৭ ব্যবহার করে হালকা থেকে মাঝারি ল্যাগ পেয়েছি। কিছু গেমের ক্ষেত্রে আমরা হাই সেটিংস এনেবল করতে পর্যন্ত অসমর্থ হয়েছি। মূলত বিভিন্ন টার্ন, জাম্পিং, রানিং এগুলোতে ডিভাইসটি প্রচুর ফ্রেম স্কিপ করে গেছে আর যার কারণেই গেমগুলো ল্যাগ করেছে। যে গেম গুলো আমরা ডিভাইসটিতে চালিয়ে দেখেছি সেগুলো হল- টেম্পল রান সিরিজ, ফ্রুট নিনজা, জিটিএ ভাইস সিটি, রিয়েল রেসিং ৩, এনএফএস মোস্ট ওয়ান্টেড। ভাইস সিটি গেম থেমে একটি স্ক্রিনশট নিচে দেয়া হল।



কানেক্টিভিটি, ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স এবং অন্যান্যঃ 

ডিভাইসটির কানেক্টিভিটি অপশন বেশ শক্তিশালী। ডিভাইসটি তে রয়েছে ব্লু টুথ ৪, ওয়াই ফাই, মাইক্রো ইউ এস বি ২, ওয়্যার লেস ডিসপ্লে শেয়ারিং এবং ইউ এস বি অন দি গো বা ওটিজি সুবিধা। পাশাপাশি রয়েছে জিপিএস এবং এজিপিএস কানেক্টিভিটি সুবিধা। একই বাজেটের বাজারে প্রচলিত অনেক ডিভাইসেই এ সবগুলো সুবিধা নেই। সেদিক থেকে ওয়ালপ্যাড তার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী থেকেই এগিয়ে রয়েছে।
ডিভাইটির সব চেয়ে বড় শক্তিশালী দিক হচ্ছে সিম ব্যবহারের সুবিধা। আপনি চাইলে এটিকে আপনার ফোনের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। ২ জি এবং ৩ জি উভয় ধরনের সিমই এতে ব্যবহার করা যাবে। সিম সুবিধা থাকার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারও অনেক সহজ। অনেক ব্যবহারকারীর পক্ষেই কেবল মাত্র ওয়াই ফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে তাদের ডিভাইসের জন্য আলাদা মোডেম বা রাউটার কেনার দরকার পরে। সরাসরি সিমের মাধ্যমে ডিভাইটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব বলে ব্যবহারকারীদের আর মোডেম কিংবা রাউটার এর ঝামেলায় পরতে হবে না। এতে অর্থেরও সাশ্রয় হবে।
ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে এতে স্টক আন্ড্রয়েড ব্রাউজার ব্যবহার করা হয়েছে। আলাদা ভাবে অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লাগিনও ইন্সটল করা আছে। কাজেই ফ্ল্যাশ সমর্থিত ওয়েবসাইট দেখতে ব্যবহারকারী কোন ধরনের সমস্যায় পরবেন না। ডিফল্ট ব্রাউজারটি বেশ দ্রুততার সাথেই কাজ করতে সক্ষম। ৭ ইঞ্চির উজ্জ্বল ডিসপ্লে, একুরেট ফন্ট রেন্ডারিং থাকায় ডিভাইসটি এর ব্যবহারকারীদের প্রশান্তিময় ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স প্রদানে সক্ষম হবে। স্ক্রিনশটে ওয়ালপ্যাডে টেক প্রিয়।

 
ব্যাটারি ব্যাকআপঃ 

এইচডি ডিসপ্লে, কোয়াড কোর প্রসেসর সম্পন্ন ডিভাইসটির শক্তি জোগাতে ব্যবহৃত হয়েছে নন রিমুভেবল ৪০০০ মিলি এম্পিয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। একবার পুরোপুরি চার্জ হতে ডিভাইটি প্রায় ২.৫-৩ ঘন্টা সময় নেয়। ব্যাকগ্রাউন্ড ইন্টারনেট চালু রেখে ফেসবুকিং, হালকা ব্রাউজিং, কিছু গান শোনা, ভিডিও দেখা, হালকা গেম খেলা প্রভৃতি কাজ করে আমরা পুরো একদিনের চেয়ে কিছু বেশি ব্যাক আপ পেয়েছি। হেভি ইউজাররা অনায়াসে একদিন ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। সব দিক বিবেচনায়, ডিভাইসটির ব্যাটারি ব্যাকআপ আরও কিছটা বেশি হতে পারত। ৪৫০০ মিলি এপমিয়ার ব্যাটারি ডিভাইসটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে পারত।

বেঞ্চমার্কঃ

বরাবরের মতই ডিভাইসটির ক্ষমতা পরীক্ষার জন্য আমরা কিছু বেঞ্চমার্ক পরীক্ষা করেছি। প্রথমেই Antutu Benchmark.  বেঞ্চমার্ক করতে Antutu Benchmark অ্যাপ এর সর্বশেষ ভার্শন ব্যবহার করা হয়েছে। Antutu Benchmark অনুযায়ী ডিভাইসটির স্কোর ১৩২০৭ যেটি মোটামুটি ভাল মানের একটি স্কোর। তালিকায় এইচটিসি ওয়ান এক্স এর পরপরই ওয়ালপ্যাডের স্থান।

 

Quadrant Advanced Benchmark অনুসারে এর স্কোর ৪১৮০। এখানেও এইচটিসি ওয়ান এক্স এর ঠিক পরেই ডিভাইটির স্থান।



জিপিইউ পারফর্মেন্স দেখার জন্য আমরা Nenamark 2 এর সাহায্য নিয়েছি। Nenamark 2 তে ডিভাইসটির স্কোর ৪৪.৪ এফপিএস যেটি একটি মাঝারি মানের স্কোর।



উপসংহারঃ 

ওয়াল্টন ওয়ালপ্যাড ৭ দেশীয় বাজারে একটি চমৎকার বাজেট ফ্রেন্ডলি ট্যাব। ১০০০০-১৫০০০ টাকার মধ্যে ট্যাবের চাহিদাও বাজারে কম নয়। নন্দিত ব্র্যান্ড গুলোর ট্যাব কেনার জন্য যেখানে আপনাকে নুন্যতম ২০০০০ টাকা খরচ করতে হবে সেখানে ওয়াল্টন সহ অন্যান্য দেশি ব্র্যান্ডকেই অধিকাংশ ক্রেতা এগিয়ে রাখবে। এর আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরাসরি চায়না থেকে স্বল্প বাজেটে ট্যাব বাজারজাত করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের ওয়ারেন্টি সংক্রান্ত ঝামেলায় পরতে হয়েছে। আবার অধিকাংশ ট্যাবেই সিম ব্যবহারের সুবিধা ছিল না। ওয়ালপ্যাড ৭ এ সমস্ত সমস্যার চমৎকার এক সমাধান। উপরে উল্লেখিত ছোট খাট কিছু সমস্যা ছাড়া ডিভাইসটি এই দামের মধ্যে বাজারের অন্যতম সেরা একটি ডিভাইস।
তবে, ওয়াল্টন ওয়ালপ্যাড কে বাজারে টিকতে হলে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। কেননা প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ইতোমদ্ধে একই বাজেটে প্রায় সমান সুবিধা সম্পন্ন ডিভাইস বাজারজাত করা শুরু করে দিয়েছে। কাছাকাছি দামের মধ্যে সিম্ফনির বাজারে নতুন আসা সিম্ফিনি ট্যাব টিএইট কিউ, গ্যাজেট গ্যাং ৭ এর আইনল এএক্স ১, কিংবা ওয়াল্টনেরই ওয়ালপ্যাড ৮, ওয়াল্টন ওয়ালপ্যাড ৭ এর বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। এছাড়া বাজারে বর্তমানে ওয়ারেন্টি ছাড়া একই মূল্যে স্যামসাং গ্যালাক্সি ট্যাব ৩ এর ওয়াইফাই সংস্করণও পাওয়া যাচ্ছে।
দেশীয় বাজারে ওয়াল্টন ওয়ালপ্যাড ৭ ট্যাবটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৪৯০ টাকা মাত্র। সব দিক বিবেচনায় এই দামে আপনি কি ট্যাবটি কেনার কথা ভাবছেন?

0 comments:

Post a Comment